আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না, ২০১৫ বাংলাদেশের জন্য কতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর ছিলো! ২০১৫-তে বাংলাদেশে কি ঘটেছিলো? অনেকেই ২০১৫-কে মনে রাখবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বিএনপির আন্দোলনের জন্য। অনেকেই মনে রাখবে ব্লগার হত্যার জন্য।কিন্ত আসল ঘটনা অনেকের চোখের সামনে ঘটলেও টের পাবে না।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার ঠিক এক বছর পরে ২০১৫ সালে প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন। তখন খুব সম্ভবত বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাঠে। আগেই বলেছি, ২০১৫ সাল একটা গুরুত্বপূর্ণ বছর। শুধু রাজনীতি না, অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য না আরো অনেক ইস্যুতেই এই বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২০১৫ সালের আগে-পরে বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি করে। এটা ছিলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট।
মূলতো এই চুক্তিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই একটা অদ্ভুত অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই চুক্তিগুলোর ফলে চাহিদার চেয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২০০০ মেগাওয়াট যেখানে সেসময়ে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ চাহিদাই ছিলো ৮১৭৭ মেগাওয়াট। এতে সমস্যা কোথায়?
ধরা যাক আপনার পরিবারের জন্য মাসে ১ কেজি চাল দরকার। কিন্তু আপনি অনেক টাকা লোন করে এমন কিছু স্টোরেজ নির্মাণ করলেন যেখানে ১০ কেজি চাল রাখা সম্ভব। এখন আপনি এক কেজি চাল রাখেন আর ১০ কেজি রাখেন, ওই স্টোরেজ বানানোর জন্য নেওয়া ঋণের টাকা কিন্ত আপনাকে শোধ করতেই হবে। প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য করা সব লোন এবং চুক্তির টাকা কিন্ত বাংলাদেশকেই শোধ করতে হচ্ছিলো।
২০১৫ সালেই আদানির সাথে বাংলাদেশ সরকারের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে চুক্তি হয়। প্রাথমিক আলোচনায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের ভেতরে স্থাপন করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে কাগজে কলমে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতের ঝাড়খন্ডে স্থাপনের বিষয়ে চুক্তি হয়।
এর কারণ অবশ্য সেসময় জানা যায়নি। খুব সম্ভবত যুক্তি দেখানো হয়েছিলো ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হলে কয়লা পরিবহনের যে খরচ সেটা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হবে। যেহেতু ঝাড়খন্ডে প্রচুর কয়লা খনি আছে। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমে আসবে।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম… আপনি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে আপনার ফ্যামিলির জন্য একটা পানির পাম্প স্থাপন করলেন। কিন্ত নিজের বাড়িতে জমি থাকা সত্যেও আপনি পাম্পটা পাশের বাড়িতে বানালেন। এবং সেখান থেকে চড়াদামে পানি কিনার চুক্তি করলেন। যেখানে আপনার পানির কোন দরকারই ছিলো না।
একথা সত্য যে ঝাড়খন্ড ভারতের প্রধান কয়লা উৎপাদনকারী প্রদেশ গুলোর একটা। কিন্ত শেষ পর্যন্ত ঝাড়খন্ডের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঝাড়খন্ডের কয়লা ব্যবহার করা হয়নি। ঝাড়খন্ডের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য কয়লা অস্ট্রেলিয়ার একটি কয়লা খনি থেকে নিয়ে আসা হয়। যার মালিকানা আদানি গ্রুপের। যে বন্দরে কয়লা খালাস করা হয় তার মালিকানাও আদানী গ্রুপের। এখন এটা সহজবোধ্য যে ঝাড়খন্ড থেকে কয়লা সংগ্রহের বদলে অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করলে সেখানে খরচ অবশ্যই বেড়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে আদানী গ্রুপ এই পথে কেন পা বাড়াল?