Search
Close this search box.

June 24, 2024

বেহেশতে দেবুদার মনটা ক্রমেই বিষিয়ে উঠতে থাকে। কারণ গোবরডাঙ্গা ও শিয়ালনগরের সাধুবাবা ও পীরসাহেব বড় রকমের বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর গৃহকর্মী মুশতাক আর গান্ধীজীর আশ্রমকর্মী নাত্থুরাম গডসের নিয়মিত যাতায়াত গোবরডাঙ্গা ও শিয়ালনগরে। মুশতাক গিয়ে মন্দির ভাঙ্গার উস্কানি দিয়ে আসে; গডসে গিয়ে গোরু জবাই বন্ধের বুদ্ধি দিয়ে আসে স্ব স্ব গোত্রে। সেই যে এক হিন্দু-মুসলমান কচলানির বদ-অভ্যাস এতো দূর হবার নয় ভারতবর্ষের বেহেশতবাসীদের। ফলে বেহেশতটাকে নরক বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে মুশতাক-গডসে চক্রটা। এরা মাঝে মাঝে দোজখে গিয়ে জামাত-আর এস এস-এর প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আসে। বেহেশতের পরিবেশটা কী করে হুবহু দক্ষিণ এশিয়ার মত বর্জ্য-ঝুড়িতে পরিণত করা যায়; সেই লক্ষ্যে তাদের এতো আয়োজন।

শান্তিনিকেতনে যাবার পথটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গোবরডাঙ্গা এবং শিয়ালনগরের লোকেদের নারী দেখলেই জিভ লক লক করে। একটি-দুটি ধর্ষণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে বেহেশতের পুলিশ বিভাগের সহায়তায়। ভাগ্যিস এরা দক্ষিণ এশিয়ার পুলিশ নয়; নইলে এরি মাঝে অঘটন ঘটে যেত। দক্ষিণ এশিয়ার পুলিশ কাজের চেয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদলিপিটা খুব সুন্দর লিখতে শিখেছে; আর কিছুই যে শেখেনি। দেবুদা বেহেশতের পুলিশেরা খুব ভালো এমন একটি সন্তোষ নিয়ে কফিতে চুমুক দিতেই খবর আসে, চুনিলাল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে; নারী পাচারকারী হিসেবে। তাজ্জব ব্যাপার চুনিলাল এবং নারী পাচার-তা আবার বেহেশতে।

শিয়ালনগর ও গোবরডাঙ্গায় গুজব রটে যায় চুনিলাল বেহেশত থেকে চারটে হুর দোজখে পাচারের চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েছে। পুলিশস্টেশানে গিয়ে দেবুদা দেখে, পার্বতী-চন্দ্রমুখী-লায়লা-জুলিয়েট আর চুনিলাল মুখ পাংশু করে বসে আছে। চুনিলালের ট্যাক্সিতে চারজন একটু লং-ড্রাইভে গিয়েছিলো। বেহেশতের পুলিশের সেটাকে নারী পাচার মনে হয়েছে। দেবুদা মনে মনে ভাবে, পুলিশ পুলিশই; তা সে বেহেশতেরই হোক বা ঢাকার রামপুরারই হোক। রামপুরা থেকে পুলিশ চারজন স্বেচ্ছাসেবীকে গ্রেফতার করেছে শিশু পাচারকারী হিসেবে। অথচ স্বেচ্ছাসেবীরা অধিকার বঞ্চিত শিশুদের স্কুল চালাতো। চুনিলালেরও একই অবস্থা বেহেশতের পুলিশের হাতে। চুনিলালকে তারা রিমান্ডে নিয়ে যাচ্ছে; জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। দেবুদার সঙ্গে চোখ গরম করে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলে, আপনি আমাদের কাজে ইন্টারফেয়ার করবেন না। আমি আইন-কানুন আপনার চেয়ে বেশী জানি।

দেবুদার কাছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফোন আসে, খুব বাজে ঘটনা ঘটে গেছে দেবু। শান্তি নিকেতনের টিউশান ফি’র ওপর ভ্যাট আরোপিত হয়েছে। শিক্ষার ওপর ভ্যাট; এ কেমন কথা! ছাত্ররা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। তবে শিয়ালনগরের কিছু সন্ত্রাসী ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে। তারা তো চায় শান্তিনিকেতন বন্ধ হয়ে যাক। সবাই শিয়ালনগরের বা গোবরডাঙ্গার লোকের মত অশিক্ষিত হয়ে থাকুক। কিছু একটা করা দরকার দেবু।

ছোট্ট ছেলেটির মন খারাপ। খুব বেশিই খারাপ। পরীক্ষায় একটি প্রশ্নের উত্তরে সে শূন্য পেয়েছে।

প্রশ্নটি ছিলো এরকম, ‘ব্যারোমিটারের সাহায্যে একটি ভবনের উচ্চতা কীভাবে মাপা সম্ভব?’ উত্তরটি তার জানা ছিল না। তাই বলে তো আর প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না। মা বারবার বলে দিয়েছে ‘ফুল অ্যান্সার’ করে আসার জন্য। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সে লিখেছিল, ‘দড়ি বেঁধে ভবনের ছাদ থেকে ব্যারোমিটারটি নিচে ফেলে দিতে হবে। তাহলে ঐ দড়ির দৈর্ঘ্যই হবে ভবনের উচ্চতা’।

শিক্ষক ঊত্তর দেখে খুশি তো হনইনি, বরং ভেবেছেন ছেলেটি দুষ্টমি করে উত্তরটি লিখেছে। তাই তাকে ডেকে খাতাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘ধরে নিলাম উত্তরটা তুমি জান, দ্বিতীয়বার তোমায় সুযোগ দিচ্ছি, চটপট উত্তরটা লিখে ফেল।’ ছেলেটি ভাবল, ‘এবার আর ভুল করা যাবে না।’ তাই এবার সে লিখল, ‘আমি ভবনের উপর থেকে নেমে এসে ভবনের অ্যাটেনডেন্টকে বলব, ভবনের প্রকৃত উচ্চতাটি বললে আমি তোমাকে এই ব্যারোমিটারটি উপহার দেব। তখন সে বলে দেবে আর আমি জেনে নেব।’

এবার হয়েছে,এবার নম্বর না দিয়ে শিক্ষক যাবেন কোথায়? এই ভেবে মনে মনে এক চোট হেসে নিলো ছেলেটি।

কিন্তু তার উত্তর দেখে এবার আর শিক্ষকও ভুল করলেন না। দিয়ে দিলেন পুরো শূন্য (0)!

পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নে ভুল করলেও পরবর্তীতে সেই ছেলেটিই হয়ে ওঠে, ‘বোর পরমাণু মডেলের’ জনক প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে এক গ্রাহকের ১৪৯ ভরি স্বর্ণ চুরি যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই বিস্মিত হলেও অল্টারনেট প্ল্যান নিয়ে এসেছেন জেন-জি নেটিজেনরা। চলুন জেনে আসি গায়েব হয়ে যাওয়ার জন্য আর কী কী রাখা যেতে পারে ইসলামী ব্যাংকের লকারে…

এনজাইটি ও ডিপ্রেশন: মানুষের জীবনে দুশ্চিন্তা এবং হতাশার শেষ নেই। এনজাইটির প্রথম টার্গেট আমাদের বাবা-মায়েরা হলেও ডিপ্রেশনের প্রথম টার্গেট আমরা। বয়স হওয়ার সাথে সাথে এটি ঝাঁপিয়ে পড়ে সকলের ওপর। সময় সুযোগ মতো যদি সব এনজাইটি এবং ডিপ্রেশন একত্র করে ইসলামী ব্যাংকের লকারে রাখতে পারেন, কল্পনা করতে পারেন কত সুন্দর একটি পৃথিবী অপেক্ষা করছে আপনার জন্য?

ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স: জীবনের কোনো না কোনো জায়গায় গিয়ে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগেন শতকরা শতভাগ মানুষ। এর প্রভাব পড়ে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবন পর্যন্ত। ইসলামী ব্যাংকের লকারে এনজাইটি কিংবা ডিপ্রেশনের মতো বাক্সবন্দী করে রাখা যায় ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সকেও।

প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকার স্মৃতি: অবিশ্বস্ত এক সূত্র মতে, ৭৭% মানুষ এক জীবনে তাদের এক্সের কথা ভুলতে পারে না, তা যত ভালো কিংবা খারাপ স্মৃতিই হোক না কেন। শুধু তাই নয়, ৪০% মানুষ তার প্রাক্তনের কথা ভেবে আঁতকে ওঠেন রাতে। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে ইসলামি ব্যাংকের লকারে রাখতে পারেন আপনার এক্সদের মেমোরিও। শুধু তাই নয়, পাস্ট ট্রমার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

ভয় এবং রাগ: ভয় এবং রাগ মানুষের জীবনের অত্যন্ত পরিচিত দুই অনুভূতি। অনেকেই অল্পতে রেগে যান কিংবা ভয় পান। রাগ বা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যা পরবর্তীতে খাল কেটে কুমির আনার মতো হয়।

এসব ক্ষেত্রে রাগ এবং ভয়কে আপনি লকারে ভরে গায়েব করে দেওয়ার আশা করতেই পারেন!

ক্রাশ: ক্রাশ খাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। তবে ঘন ঘন এবং গভীর ক্রাশ থেকে বাঁচতে ইসলামী ব্যাংক হতে পারে আপনার সেভিওর। ক্রাশের নাম, ঠিকানা, ছবি এবং তার প্রতি আপনার অনুভূতি লিখে জমা দিয়েন আসুন ইসলামী ব্যাংকে। দেখবেন সেখান থেকে রাতারাতি গায়েব হয়ে গিয়েছে আপনার ঝামেলা।

সম্প্রতি ইদকে সামনে রেখে একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে কোকাকোলা বাংলাদেশ। বিজ্ঞাপনটি নিয়ে চারদিকে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। এই আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই কোককে ধন্যবাদ দিলো বাংলাদেশের বাজারে কোকের অন্যতম কম্পিটিটর মোজো। জানা গেছে, মোজোর ইদের ক্যাম্পেইনের খরচ বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বরুপ কোকের মার্কেটিং টিমকে এই ধন্যবাদ দেয় তারা।

মোজো মার্কেটিং টিমের এক কর্মকর্তা নিজের ফেক আইডি থেকে বলেন, কোককে ধন্যবাদ। কোকের মত এমন কম্পিটিটর থাকলে আর কারও বন্ধুর দরকার হয় না। তারাই সব করে দেয়। এই যে দেখেন, আমাদের পুরা ইদ ক্যাম্পেইনের খরচ বেঁচে গেছে। কোকই সেটা করে দিয়েছে। এমন কম্পিটিটর আপনি আর কোথায় গেলে পাবেন!

কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কোকের সাথে ইদের প্রফিট শেয়ার করবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা। নিজের ফেক আইডি থেকে তিনি বলেন, আমরা ইদে যা লাভ করবো, তা থেকে কিছু অংশ কোককে দিবো বলে ভাবছি। পাশাপাশি আমাদের পক্ষ হয়ে এমন একটি অসাধারণ বিজ্ঞাপন করে দেয়ার জন্য কোকের ব্র্যান্ডিং টিমকেও আমরা কিছু টাকা-পয়সা দিতে চাই।

এদিকে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর কোকের সেলস টিমের লোকজনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। ইদে সেলস টার্গেট মিলাতে পারবেন নাকি পারবেন তা নিয়ে ব্যাপক চিন্তায় আছেন তারা। এমনই একজন নিজের ফেক আইডি থেকে বলেন, ভাই, ভাবছিলাম এই ইদে কোক বিক্রি করে উড়ায়ে ফেলব। টার্গেটও সেট করছিলাম অনেক। এই বিজ্ঞাপন দেখার পর মুখ থেকে একটা কথাই বের হয়েছে, ওস্তাদ, গোয়া মারা সারা। এখন আমি এই সেলস টার্গেট নিয়ে কোথায় যাব।

অর্থ বড় না প্রেম (মতান্তরে কাম) বড় এই রকম জটিল বিষয়ে আমার একটি গল্প ছিল সম্পাদকের দপ্তরে।

সারা বছর ধরে কত গল্পই যে লিখি। সম্পাদক ছাপেন, পাঠকেরা পড়েন, তারপর ভুলে যান।

আমিও ভুলে যাই। এত লিখলে কারও কিছু মনে থাকে।

এখন যে গল্পের কথা বলছি, সে গল্পের ব্যাপার কিন্তু একটু আলাদা।

এই গল্পটি ছাপা হয়নি।

সম্পাদক মহোদয়ের পছন্দ হয়নি তা নয়। অনিবার্য এক কারণে ছাপা হয়নি। পাঠকেরা গীতা না পড়লেও সেই শ্লোক মাঝে মধ্যে খবরের কাগজে পড়ে থাকবেন, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পরলোক গমনের অলংকৃত বিজ্ঞাপনে ছাপা হয়, যার মোদ্দা কথা হল আত্মাকে সুঁচ ফুটো করতে পারে না, আগুন পোড়াতে পারে না। ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আমার গল্পও সেইরকম।

এই পটভূমিকায় এবারের এই গল্প।

গল্পটি নতুন করে লিখতে হবে।

কিন্তু একই গল্প কি দুবার লেখা যায়?

গল্পের ধরনটা আবছা আবছা মনে আছে। কিন্তু পুরো গল্পটা কিছুতেই একরকম হবে না।

একই নদীর জলে দুবার ডুব দেওয়া যায় না। একই পথে দুবার হাঁটা যায় না। নদীর জল বয়ে যায়, রাস্তার লোকজন, আলোছায়া বদলিয়ে যায়। আরও একটু ঘনিষ্ঠভাবে একবার আমি নিজেই লিখেছিলাম, একই ঠোঁটে দুবার চুমু খাওয়া যায় না। প্রথম চুমু খেতে দ্বিতীয় চুমু ওষ্ঠাধিকারিণী খণ্ডমুহূর্তে বদলিয়ে যান।

এ সমস্তই মেনে নিয়ে এবার গল্পটাকে ধরার চেষ্টা করছি।

গল্পের নায়িকার নাম খুব সম্ভবত জয়ন্তী। এ নামটা আমার খুব প্রিয়। তা ছাড়া, এ নামে আমার পরিচিত কেউ নেই, তাই নিরাপদে ব্যবহার করা যায়। তবু অনেক সময় একটু এদিক ওদিক করে জয়ন্তী, জয়া, বিজয়া এসব নামও ব্যবহার করি।

তবু, আপাতত জয়ন্তীই চলুক।

জয়ন্তী নববিবাহিতা। বারাসতের কাছে একটা গ্রাম মাঠপুকুর। সেখানে বাপের বাড়িতে থাকে। কাছেই কাটাখালি গ্রামের একটা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা।

জয়ন্তীর বরের নাম যাই হোক, আমরা এ গল্পে জয়ন্তীর নাম মিলিয়ে তাকে জয়ন্ত বলে ডাকব। জয়ন্ত বারাসত কলেজের বি এস সি। বেশ ভাল ছাত্র। সরকারি ক্লার্কশিপ পরীক্ষা দিয়ে সে একটি কেরানির চাকরি করছে সল্টলেকে রাজ্য সরকারের একটি ডিরেক্টরেটে। আজকাল এসব চাকরিতে মাইনে ভাল, ভবিষ্যত ভাল, নিরাপত্তাও যথেষ্ট।

জয়ন্তের একটাই মহাদোষ। সে বড় কৃপণ। আড্ডার ভাষায় রাম চিপপোস।

অবশ্য অনেক সময় দেখা যায় কৃপণ দুর্নাম কোনও কোনও মানুষের ঘাড়ে অনায়াসে চেপে বসে অতি সামান্য কারণেই। হয়তো ভদ্রলোক চায়ে চিনি কম খান, হয়তো তিনি অফিসে প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা খুব বেশি কাটান। হয়তো প্রতিবেশীর মেয়ের বিয়েতে দুশো টাকা দামের শাড়ি না দিয়ে চল্লিশ টাকা দামের কবিতার বই দেন।

কিন্তু জয়ন্তের কৃপণ অখ্যাতির ব্যাপারে আরও গুরুতর ঘটনা আছে। দু-একটা উদাহরণ দিই:

(১) জয়ন্ত নিজে রান্না করে খায়। সে প্রথমে ডাল রাঁধে। তারপর রাঁধা ডাল থেকে সেদ্ধ হয়ে যাওয়া কাঁচা লঙ্কা, শুকনো লঙ্কা তুলে সেগুলো দিয়ে তরকারি রাঁধে নতুন করে লঙ্কা দেয় না।

(২) জয়ন্ত দাড়ি কামানোর পরে সাবানের বুরুশ ধোয় না। ভাত খেয়ে উঠে ধোয়। এতে ভাত খেয়ে হাত ধোয়ার জন্যে আলাদা সাবান ব্যয় করতে হয় না।

(৩) দেশলাই অগ্নিমূল্য হওয়ার পরে জয়ন্ত আর দেশলাই ব্যবহার করে না। সিগারেট লাইটার ব্যবহার করে। কিন্তু যখন ব্যবহার করত, দেশলাই বাক্সগুলোর মোটা মোটা কাঠিগুলো বার করে ব্লেড দিয়ে সেগুলো দু-টুকরো করত। এভাবে বিশ-পঁচিশটা কাঠি বেশি হয়ে যেত।

কৃপণ স্বভাবের মানুষদের সম্পর্কে এসব গল্প তো অনেক ক্ষেত্রেই খাটে। কিন্তু জয়ন্ত সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো না বললে তাকে পুরোটা বোঝা যাবে না।

আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না, ২০১৫ বাংলাদেশের জন্য কতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর ছিলো! ২০১৫-তে বাংলাদেশে কি ঘটেছিলো? অনেকেই ২০১৫-কে মনে রাখবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বিএনপির আন্দোলনের জন্য। অনেকেই মনে রাখবে ব্লগার হত্যার জন্য।কিন্ত আসল ঘটনা অনেকের চোখের সামনে ঘটলেও টের পাবে না।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার ঠিক এক বছর পরে ২০১৫ সালে প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন। তখন খুব সম্ভবত বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাঠে। আগেই বলেছি, ২০১৫ সাল একটা গুরুত্বপূর্ণ বছর। শুধু রাজনীতি না,  অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য না আরো অনেক ইস্যুতেই এই বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২০১৫ সালের আগে-পরে বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি করে। এটা ছিলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট।

মূলতো এই চুক্তিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই একটা অদ্ভুত অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই চুক্তিগুলোর ফলে চাহিদার চেয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২০০০ মেগাওয়াট যেখানে সেসময়ে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ চাহিদাই ছিলো ৮১৭৭ মেগাওয়াট। এতে সমস্যা কোথায়?

ধরা যাক আপনার পরিবারের জন্য মাসে ১ কেজি চাল দরকার। কিন্তু আপনি অনেক টাকা লোন করে এমন কিছু স্টোরেজ নির্মাণ করলেন যেখানে ১০ কেজি চাল রাখা সম্ভব। এখন আপনি এক কেজি চাল রাখেন আর ১০ কেজি রাখেন, ওই স্টোরেজ বানানোর জন্য নেওয়া ঋণের টাকা কিন্ত আপনাকে শোধ করতেই হবে। প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য করা সব লোন এবং চুক্তির টাকা কিন্ত বাংলাদেশকেই শোধ করতে হচ্ছিলো।

২০১৫ সালেই আদানির সাথে বাংলাদেশ সরকারের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে চুক্তি হয়। প্রাথমিক আলোচনায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের ভেতরে স্থাপন করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে কাগজে কলমে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতের ঝাড়খন্ডে স্থাপনের বিষয়ে চুক্তি হয়।

এর কারণ অবশ্য সেসময় জানা যায়নি। খুব সম্ভবত যুক্তি দেখানো হয়েছিলো ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হলে কয়লা পরিবহনের যে খরচ সেটা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হবে। যেহেতু ঝাড়খন্ডে প্রচুর কয়লা খনি আছে। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমে আসবে।

ব্যাপারটা অনেকটা এরকম… আপনি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে আপনার ফ্যামিলির জন্য একটা পানির পাম্প স্থাপন করলেন। কিন্ত নিজের বাড়িতে জমি থাকা সত্যেও আপনি পাম্পটা পাশের বাড়িতে বানালেন। এবং সেখান থেকে চড়াদামে পানি কিনার চুক্তি করলেন। যেখানে আপনার পানির কোন দরকারই ছিলো না।

একথা সত্য যে ঝাড়খন্ড ভারতের প্রধান কয়লা উৎপাদনকারী প্রদেশ গুলোর একটা। কিন্ত শেষ পর্যন্ত ঝাড়খন্ডের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঝাড়খন্ডের কয়লা ব্যবহার করা হয়নি। ঝাড়খন্ডের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য কয়লা অস্ট্রেলিয়ার একটি কয়লা খনি থেকে নিয়ে আসা হয়। যার মালিকানা আদানি গ্রুপের। যে বন্দরে কয়লা খালাস করা হয় তার মালিকানাও আদানী গ্রুপের। এখন এটা সহজবোধ্য যে ঝাড়খন্ড থেকে কয়লা সংগ্রহের বদলে অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করলে সেখানে খরচ অবশ্যই বেড়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে আদানী গ্রুপ এই পথে কেন পা বাড়াল?