Search
Close this search box.

গণতন্ত্র উপভোগ করুন (প্যাসেজ টু হেভেন: পর্ব ২০)

বেহেশতে দেবুদার মনটা ক্রমেই বিষিয়ে উঠতে থাকে। কারণ গোবরডাঙ্গা ও শিয়ালনগরের সাধুবাবা ও পীরসাহেব বড় রকমের বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর গৃহকর্মী মুশতাক আর গান্ধীজীর আশ্রমকর্মী নাত্থুরাম গডসের নিয়মিত যাতায়াত গোবরডাঙ্গা ও শিয়ালনগরে। মুশতাক গিয়ে মন্দির ভাঙ্গার উস্কানি দিয়ে আসে; গডসে গিয়ে গোরু জবাই বন্ধের বুদ্ধি দিয়ে আসে স্ব স্ব গোত্রে। সেই যে এক হিন্দু-মুসলমান কচলানির বদ-অভ্যাস এতো দূর হবার নয় ভারতবর্ষের বেহেশতবাসীদের। ফলে বেহেশতটাকে নরক বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে মুশতাক-গডসে চক্রটা। এরা মাঝে মাঝে দোজখে গিয়ে জামাত-আর এস এস-এর প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আসে। বেহেশতের পরিবেশটা কী করে হুবহু দক্ষিণ এশিয়ার মত বর্জ্য-ঝুড়িতে পরিণত করা যায়; সেই লক্ষ্যে তাদের এতো আয়োজন।

শান্তিনিকেতনে যাবার পথটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গোবরডাঙ্গা এবং শিয়ালনগরের লোকেদের নারী দেখলেই জিভ লক লক করে। একটি-দুটি ধর্ষণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে বেহেশতের পুলিশ বিভাগের সহায়তায়। ভাগ্যিস এরা দক্ষিণ এশিয়ার পুলিশ নয়; নইলে এরি মাঝে অঘটন ঘটে যেত। দক্ষিণ এশিয়ার পুলিশ কাজের চেয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদলিপিটা খুব সুন্দর লিখতে শিখেছে; আর কিছুই যে শেখেনি। দেবুদা বেহেশতের পুলিশেরা খুব ভালো এমন একটি সন্তোষ নিয়ে কফিতে চুমুক দিতেই খবর আসে, চুনিলাল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে; নারী পাচারকারী হিসেবে। তাজ্জব ব্যাপার চুনিলাল এবং নারী পাচার-তা আবার বেহেশতে।

শিয়ালনগর ও গোবরডাঙ্গায় গুজব রটে যায় চুনিলাল বেহেশত থেকে চারটে হুর দোজখে পাচারের চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েছে। পুলিশস্টেশানে গিয়ে দেবুদা দেখে, পার্বতী-চন্দ্রমুখী-লায়লা-জুলিয়েট আর চুনিলাল মুখ পাংশু করে বসে আছে। চুনিলালের ট্যাক্সিতে চারজন একটু লং-ড্রাইভে গিয়েছিলো। বেহেশতের পুলিশের সেটাকে নারী পাচার মনে হয়েছে। দেবুদা মনে মনে ভাবে, পুলিশ পুলিশই; তা সে বেহেশতেরই হোক বা ঢাকার রামপুরারই হোক। রামপুরা থেকে পুলিশ চারজন স্বেচ্ছাসেবীকে গ্রেফতার করেছে শিশু পাচারকারী হিসেবে। অথচ স্বেচ্ছাসেবীরা অধিকার বঞ্চিত শিশুদের স্কুল চালাতো। চুনিলালেরও একই অবস্থা বেহেশতের পুলিশের হাতে। চুনিলালকে তারা রিমান্ডে নিয়ে যাচ্ছে; জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। দেবুদার সঙ্গে চোখ গরম করে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলে, আপনি আমাদের কাজে ইন্টারফেয়ার করবেন না। আমি আইন-কানুন আপনার চেয়ে বেশী জানি।

দেবুদার কাছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফোন আসে, খুব বাজে ঘটনা ঘটে গেছে দেবু। শান্তি নিকেতনের টিউশান ফি’র ওপর ভ্যাট আরোপিত হয়েছে। শিক্ষার ওপর ভ্যাট; এ কেমন কথা! ছাত্ররা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। তবে শিয়ালনগরের কিছু সন্ত্রাসী ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে। তারা তো চায় শান্তিনিকেতন বন্ধ হয়ে যাক। সবাই শিয়ালনগরের বা গোবরডাঙ্গার লোকের মত অশিক্ষিত হয়ে থাকুক। কিছু একটা করা দরকার দেবু।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *